বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর : ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাসায় ঢুকে তরুণীকে ধর্ষণচট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে বাসায় ঢুকে এক তরুণীকে ধর্ষণের পর ভিডিও চিত্র ধারণ করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত ৫ যুবককে আটক করেছে চকবাজার থানা পুলিশ।
নগরীর চকবাজার থানাধীন বাদুরতলা জঙ্গিশাহ মাজার এলাকায় আলম ভিলা এর ৪র্থ তলার ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। ভিকটিম ওই ফ্ল্যাটে ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া হিসাবে ৩ মাস ধরে বসবাস করছিলেন।
বৃহস্পতিবার দিনগত মধ্যরাতে নগরের চকবাজার থানার জঙ্গিশাহ মাজার লেন এলাকার কয়েকটি বাসা থেকে ওই যুবকদের গ্রেফতার করা হয়। চকবাজার থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতারকৃত যুবকদের মধ্যে রয়েছে- নগরের চকবাজার থানার বাদুরতলা জঙ্গিশাহ মাজার গেট এলাকার ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুর রহমান চৌধুরীর ছেলে মো. মহিউদ্দীন (২২), সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাইমুন ইসলাম সাকিব (২২), আবু নাছেরের ছেলে আসিফ ইকবাল (২৫), চান্দগাঁও বারইপাড়া এলাকার জামাল উদ্দীনের ছেলে রাজবির হোসেন নয়ন (২২) ও আনোয়ার হোসেনের ছেলে মোশারফ হোসেন আকাশ (২২)।
তাদের বিরুদ্ধে চকবাজার থানার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেছেন ধর্ষণের শিকার ওই কলেজ ছাত্রী। শুক্রবার বিকেলে গ্রেফতারকৃতদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
থানায় দায়েরকৃত মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, নগরীর বাদুরতলা জঙ্গিশাহ মাজারের পূর্ব পাশে আলম ভিলার ৪র্থ তলা একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন কলেজছাত্রী দুই বান্ধবী। সেখানে থেকেই তারা দু‘জন বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেলেন। এ জন্য বাসায় এসে প্রাইভেট শিক্ষক তাদেরকে পড়াতেন।
এরপর থেকে স্থানীয় কিছু যুবক চলাফেরার পথে উত্ত্যক্ত করতো এই কলেজছাত্রীকে। গত ৯ জুলাই দিনগত রাত আটটার দিকে প্রাইভেট শিক্ষক বাসায় আসার পর পরই বাসার দরজা নক করার শব্দ পাওয়া যায। এ সময় দরজার পাশে গিয়ে কে জিজ্ঞেস করতেই বাহির থেকে ডিবি পুলিশের লোক বলে পরিচয় দেয়। সে সময় ডিবি পুলিশ মনে করে দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ৫ যুবক বাসায় ঢুকে এবং তাকে এলোপাতারি মারধর করে।
একপর্যায়ে বাসায় থাকা প্রাইভেট শিক্ষক, বন্ধুকেও মারধর করে তারা। এছাড়া তার অপর বান্ধবীকে অন্য এক কক্ষে নিয়ে আটকিয়ে রাখে। পরে এই কলেজছাত্রী ও তার বান্ধবীকে বেডরুমে নিয়েও মারধর এবং অশ্লীলভাষায় গালাগাল করে তারা।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই যুবকরা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের লোক এবং বাসায় অসামাজিক কার্যকলাপ করা হয় দাবি করে দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। সে সময় তল্লাশির ছলে বাসার মালামাল তছনছ করে ফেলে। এরপর এই চাঁদার পরিমান আরও বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা দেয়ার জন্য চাপ দেয় তারা। তবে টাকা দিতে অপরাগতা জানাতেই চাঁদার জন্য সময় বেধে দেয় তারা।
এরপর ওই কলেজছাত্রীর গলায় চাকু ধরে ডিবি পরিচয়ে বাসায় ঢুকা সাকিব এবং অপর যুবক তারেক বুকের ওড়না কেড়ে নিয়ে দুই হাত বেধে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। এরপর ড্রয়িং রুমে নিয়ে মেঝেতে ফেলে সাকিব তাকে ধর্ষণ করে।
এসময় আসামিদের মধ্যে কেউ একজন মোবাইলে ফ্ল্যাস লাইটের মাধ্যমে ধর্ষণের সেই ভিডিও চিত্র ধারণ ও নগ্নছবি তোলে এবং তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে নগ্ন ছবি প্রচার করে দেয়ার হুমকি দেয় তারা।
পরে ওই কলেজছাত্রী, তার বান্ধবী ও প্রাইভেট শিক্ষককে সম্পূর্ণ নগ্ন করে এক সঙ্গে বসিয়ে ছবি তোলে। এরপর বাসায় অসামাজিক কাজ করা হয়- জোরপূর্বক এমন স্বীকারোক্তি আদায় করে ভিডিও ধারণ করে তারা।
এর পর ধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রীর বান্ধবীকে একটি কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ ও নগ্ন ভিডিও ধারণের চেষ্টাকালে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। এতে সে ধর্ষণ থেকে রক্ষা পায়।
পরে তারা ধর্ষিতার দুটি মোবাইল, প্রাইভেট শিক্ষকের দুটি মোবাইল, একটি এইচপি ল্যাপটপ, বান্ধবীর একটি মোবাইলসহ তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়।
এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর পরই পুলিশ মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ৫ যুবককে গ্রেফতার করে।